আগেই উল্লেখ করেছি, এম এন লারমা শুধু পাহাড়ের জাতিসত্তাগুলোর স্বীকৃতি ও অধিকারের কথা ভাবেননি। তিনি একই সঙ্গে সমতলের জাতিসত্তাদের কথা, নিম্নবর্গ প্রান্তিক মানুষগুলোর কথা বারবার গণপরিষদে উত্থাপন করেছিলেন, দাবি তুলেছিলেন তাঁদের অধিকারগুলো যেন সংবিধানে স্থান পায়। এম এন লারমা ছিলেন প্রকৃতই মেহনতি মানুষের প্রতিনিধি। তিনি সর্বদা চেয়েছিলেন একটি সাম্য ও ন্যায্য সমাজ, যেখানে আদিবাসী, নিম্নবর্গ প্রান্তিক মানুষেরও ন্যায্যতা নিশ্চিত হবে।
এম এন লারমা ছিলেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন রাজনৈতিক নেতা, যিনি সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের ঊর্ধ্বে উঠে সব মেহনতি মানুষের কথা যেমন ভাবতেন, তেমনি সংসদে দাঁড়িয়ে তাদের কথা বলে গেছেন বলিষ্ঠ কণ্ঠে। তিনি শুধু দেশ থেকে দুর্নীতি উচ্ছেদ, কারাগার সংস্কার, যৌনকর্মীদের পুনর্বাসন, বাক-স্বাধীনতার কথা বলেননি, একই সঙ্গে দেশের শোষিত-বঞ্চিত কৃষক, শ্রমিক, মাঝি, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতিদের অধিকার নিয়েও সবসময় সোচ্চার ছিলেন।
ব্যক্তি জীবনেও এম এন লারমা ছিলেন খুবই মৃদুভাষী, অমায়িক, নম্র, ক্ষমাশীল, সৎ ও নিষ্ঠাবান। তিনি অত্যন্ত সাধাসিধা জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। কর্মময় জীবনেও তিনি একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি ছিলেন। শিক্ষকতা ও আইন পেশায় ছিল তার যথেষ্ট সুনাম আর খ্যাতি। তিনি ছিলেন একাধারে শিক্ষক, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ এবং একজন সচেতন পরিবেশবাদীও। যতদিন তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে ছিলেন, ততদিন পাহাড়ের জীব-পরিবেশ সংরক্ষণের ওপর তার ছিল কড়া নজরদারি। একদিকে পরিবেশ বজায় রাখতে গিয়ে জুমচাষিদের যাতে কোনোরূপ ক্ষতির মুখোমুখি হতে না হয় সেদিকে যেমন ছিল তার সজাগ দৃষ্টি, তেমনি জুমচাষের জন্য জুমভূমি পোড়াতে গিয়ে যেন প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট না হয় সে জন্য বাতাসের গতিবেগ দেখে জুম পোড়ানোর সময় জুমচাষিদের সহযোগিতা করতে পার্টি কর্মীদের নির্দেশ দিতেন।