স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তানে তিনটি সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। ১৯৫৮, ১৯৭৭ ও ১৯৯৯ সালে। জন্মকালের প্রায় অর্ধেক সময় সরাসরি সেনাশাসন পেয়েছে পাকিস্তান। বাকি সময়েও সেনাবাহিনী কার্যত ক্ষমতার মূল কেন্দ্র হিসেবেই থেকেছে। পাকিস্তানে এমন একটা হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হয়েছে, যেখানে নির্বাচিত সরকারগুলো সেনাবাহিনীর ছায়ায় পরিচালিত হয়।
সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা শাখা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) একাধারে রাজনৈতিক কিংমেকার ও অভ্যন্তরীণ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। আইএসআইকে ‘রাষ্ট্রের ভেতরে আরেকটি রাষ্ট্র’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। দায়মুক্তি নিয়েই আইএসআই নির্বাচনে কারচুপি, নতুন রাজনৈতিক দল গঠন এবং ভিন্নমত দমনে কাজ করে।
২০১৮ সালে আইএসআই প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করে এবং সমালোচকদের ভয় দেখিয়ে ইমরান খানকে ক্ষমতায় এনেছিল। কিন্তু ইমরান খান যখন সেনাবাহিনীর কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করলেন এবং গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগে তাদের হস্তক্ষেপ মানতে অস্বীকৃতি জানালেন, তখন সেনা ‘এস্টাবলিশমেন্ট’ তাঁর বিরুদ্ধে চলে গেল। ২০২৩ সালে ব্যাপকভাবে নিন্দিত দুর্নীতির অভিযোগে তাঁকে কারাবন্দী করা হয়। ইমরানের দলকে ভেঙে দেওয়া হয়, ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং নির্বাচনের ফল ইচ্ছেমতো কারসাজি করে তাঁর ফেরার পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়।
বর্তমানে ইমরান খান কারাবন্দী। তাঁর মুক্তির ব্যাপারটি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ভবিষ্যতের কোনো সমঝোতার ওপরই নির্ভর করছে।
এই যে দুষ্টচক্র, সেটা কিন্তু নতুন নয়। ১৯৯০ সালে বেনজির ভুট্টোকে আটকাতে আইএসআই রক্ষণশীল রাজনীতিবিদদের কোটি কোটি টাকা দিয়েছিল। ২০০২ সালে জেনারেল পারভেজ মোশাররফের আমলে নির্বাচন কারসাজির মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছিল সেনাসমর্থিত নতুন দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কিউ) যেন সর্বাধিক আসন পায়। ২০১৩ সালে বেলুচিস্তানে ভোটকেন্দ্রগুলো সহিংসভাবে দখল করা হয়েছিল।