ওই সময় খেয়াল করলাম, সেনারা নিজেদের মধ্যে কানে কানে কথা বলছে। এরপরই বাড়িতে লুটপাট শুরু করল। সিন্দুক ভেঙে সোনার গয়না আর দামি জিনিসপত্র নিল। এরপর দোতলার ঘরগুলোতে গানপাউডার ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দিল। একইভাবে এরপর নিচতলার ঘরগুলোতে আগুন দিল। আমরা নির্বাক।
আমি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি। আকস্মিক ঘটনায় ভয়ে কুঁকড়ে যাই। আতঙ্কে কেউ কোনো কথাই বলতে পারছিলাম না। এরপর একটি ঘরে আমাদের ঢুকতে বলা হলো। আব্বা, মা, মায়ের কোলে ছোট্ট জামিল আর তাঁর আঁচল ধরে আমার দুই বছরের ছোট জাকি, হায়দার চাচা, চাচি, তাঁদের ভাগনে, আমার দুই বোনের সঙ্গে আমি তড়িঘড়ি করে ঘরে ঢুকে পড়লাম। যে যার মতো আশ্রয় নিলাম সোফার পাশে, খাটের নিচে। অন্ধকার ঘরটা বাইরে থেকে বন্ধ করার ব্যবস্থা নেই। ওদিকে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আছি।
এর মধ্যেই গুলির শব্দ। সেই শব্দে কানে তালা লেগে গেল।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সেনারা বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর সোফার পাশে আর খাটের নিচে থেকে বের হই। বের হতেই মেঝেতে দেখি, আমার বড় বোন (মাহবুবা খাতুন) আর হায়দার চাচার ভাগনে (নামটা এখন মনে পড়ছে না) গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন। হতবিহ্বল হয়ে আমরা তাঁদের ধরতে ধরতেই শুনি, আব্বার ঊরুতে আর ছোট বোন মাসকুরা খাতুনের পেটেও গুলি লেগেছে।