সরকার প্রতিষ্ঠার একদম প্রথমেই এ ধরনের ‘সিলেকটিভ দায়মুক্তি’ দেওয়া আসলে কতটা ন্যায়সংগত বা নতুন মোড়কে রাজনৈতিক বৈষম্যকেই পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে কি না, সে প্রশ্ন ওঠে। ঠিক যেমনটা আমরা পূর্ববর্তী সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে দেখেছি যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে গুম, খুন বা বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় সুষ্ঠু বিচার হয়নি বলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ইতিহাসের অধ্যাপক রিচার্ড মিনিয়ার ১৯৭১ সালে তাঁর পূর্ব এশিয়ার আন্তর্জাতিক সামরিক ট্রাইব্যুনাল নিয়ে লেখা গ্রন্থে ‘ভিক্টরস জাস্টিস’ বা ‘বিজয়ীর ন্যায়বিচার’ ধারণাটি প্রথম ব্যবহার করেন, যেখানে একটি সংঘাত–উত্তরকালে ক্ষমতাধর পক্ষ বিরোধী পক্ষকে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে শাস্তি দিলেও নিজেদের একই ধরনের অপরাধ বা অন্যায়কে উপেক্ষা করে বা ক্ষমা করে দেয়। ক্ষমতার পালাবদলে এ সময়ের ‘বিজয়ীদের’ কাছ থেকে রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগে গুণগত কোনো পরিবর্তন কি দেখতে পাচ্ছি আমরা, তা ভেবে দেখা প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে ওএইচসিএইচআর প্রতিবেদনের ১৮ নম্বর সুপারিশের উল্লেখ করা যায়, যেখানে গণগ্রেপ্তারের সংস্কৃতি বন্ধ করার জন্য পুলিশকে বাধ্যতামূলক আদেশ জারি এবং প্রয়োগ করার কথা বলা হয়েছে, বিশেষত যেখানে অপ্রমাণিত এবং সন্দেহভাজন তালিকার ওপর ভিত্তি করে গণগ্রেপ্তার করা হয়। অথচ ১৬ জুলাই এনসিপির ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে (যা দেশের অন্যান্য জেলায় ‘জুলাই পদযাত্রা’ হিসেবেই উল্লেখিত হয়েছে) এনসিপির দলীয় নেতাদের ওপর ‘আওয়ামী সন্ত্রাসীদের’ আক্রমণের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সময় অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন এবং পাঁচজন মারা যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে এসেছে।
বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন আরেকজনকে নির্দেশ দিচ্ছেন, ‘ডাইরেক্ট গুলি কর!’ তখন আরেকজন উত্তর দিলেন, ‘গুলি তো করছি স্যার।’ দৌড়ে পালিয়ে যাওয়া মানুষদের পেছন থেকে গুলি করতে করতে তাদের এভাবে এগিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে মনে হলো রিওয়াইন্ড করে ঠিক এক বছর আগে চলে গেছি, যখন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মরে পড়ে থাকা ছাত্রের ভিডিও দেখাতে দেখাতে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলছিলেন, ‘স্যার, গুলি করলে মরে একটা, আহত হয় একটা, একটাই যায়, বাকিডি যায় না। এইটাই হলো স্যার সবচেয়ে বড় আতঙ্কের আর দুশ্চিন্তার বিষয়।’