মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন আধিপত্য পোক্ত করার জন্য কতটা দায়ী সাদ্দাম


মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পোক্ত হয়

ইরাক কুয়েতে হামলার পর সৌদি আরবসহ কয়েকটি উপসাগরীয় দেশের আহ্বানে যুদ্ধের ময়দানে নেমেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে এ অঞ্চল ঘিরে ওয়াশিংটনেরও নিজস্ব কিছু স্বার্থ ছিল। প্রেসিডেন্ট বুশ চাচ্ছিলেন, এই সুযোগে উপসাগরীয় অঞ্চলে সামরিক ঘাঁটি গেড়ে পরাশক্তি হিসেবে নিজের অবস্থান আরও পোক্ত করতে।

কুয়েত থেকে ইরাক পিছু হটার পর মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের ব্যবসাও রমরমা হয়েছিল। যুদ্ধের পর উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থা বা জিসিসি দেশগুলো নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র কেনা শুরু করে।

এ ছাড়া সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইনসহ আরব উপদ্বীপের বিভিন্ন দেশে সামরিক ঘাঁটি গড়ে তোলে মার্কিন বাহিনী। সর্বোপরি, ইরাক-কুয়েত যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের শক্তপোক্ত আস্তানা গড়ে তোলে যুক্তরাষ্ট্র।

ইরাকের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে—এমন অজুহাত তুলে ২০০৩ সালে সাদ্দাম সরকারের বিরুদ্ধেই ইরাকে আবার হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এতে দেশটি তছনছ হয়ে যায়। ক্ষমতাচ্যুত হন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম। আত্মগোপনে চলে যান তিনি। ২০০৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর জন্মশহর তিকরিতের পাশে একটি সুড়ঙ্গ থেকে মার্কিন সেনারা সাদ্দামকে পাকড়াও করেন।

সাদ্দামকে আটক করা সেনারা জানান, সুড়ঙ্গের ভেতরে ছোট্ট একটি কক্ষে ছিলেন তিনি। ওই কক্ষে পাশাপাশি দুটি বিছানা পাতা ছিল। ছোট্ট একটি ফ্রিজ ছিল। তাতে ছিল কয়েক ক্যান লেমনেড, একটি হটডগের প্যাকেট আর চকলেটের একটি খোলা প্যাকেট। কক্ষের মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল নতুন কেনা কয়েক পাটি জুতা।

২০০৫ সালের অক্টোবরে সাদ্দামের বিচার শুরু হয়। চলে টানা ৯ মাস। তাঁকে ১৯৮২ সালে ইরাকের দুজাইল গ্রামে শিয়া সম্প্রদায়ের ১৪৮ জনকে হত্যার অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়।

২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর পবিত্র ঈদুল আজহার দিন রাজধানী বাগদাদে সাদ্দামের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর সাদ্দামের মরদেহ বাগদাদের সুরক্ষিত ‘গ্রিন জোন’ এলাকায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বাসার কাছে সড়কে ফেলে রাখা হয়েছিল বলে পরে এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেন ইরাকের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফা আল-খাদিমি। একসময়কার প্রতাপশালী এই প্রেসিডেন্টের এমন নির্মম পরিণতির সাক্ষী হয় বিশ্ব।

তথ্যসূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, কাউন্টার পাঞ্চ, রয়টার্স, আল-জাজিরা



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *