একাত্তরে ছিল মুক্তিযোদ্ধা। চব্বিশে দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে। আমরা এখন পাচ্ছি ‘জুলাই যোদ্ধা’। জুলাই যোদ্ধাদের দেওয়া হবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। তাঁরা নানান রাষ্ট্রীয় সুবিধা পাবেন। চিকিৎসা পাবেন, চাকরি পাবেন, ভাতা পাবেন। এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল থেকে ভাগ্যান্বেষণে আসা যোদ্ধারা টাকা, তালুক ও গনিমতের মালের জন্য রাজশক্তির হয়ে লাঠি-তলোয়ার-বন্দুক ধরত। এরা ছিল মার্সেনারি বা ভাড়াটে সৈন্য। নানান ইহজাগতিক সুবিধা পাইয়ে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশকে আমরা ইতিমধ্যেই ভাড়াটে সৈনিক বানিয়ে দিয়েছি। সেখানে গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’। কোনোমতে একটা সনদ জোগাড় করতে পারলেই বসে বসে মোটা অঙ্কের একটা ভাতা পাওয়া যায়।
আবার রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার কপালে সনদ জোটেনি। জুলাই যোদ্ধাদের নিয়েও হচ্ছে এই তেলেসমাতি। যে কোটার বিরুদ্ধে তাঁরা আন্দোলন করেছিলেন, সেই কোটার ফাঁদেই আবার ফেলা হচ্ছে তাঁদের। এর ফলে জনগণের অবশিষ্ট অংশ থেকে তাঁদেরকে সহজেই বিচ্ছিন্ন করা যাবে।
যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন, যাঁরা চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন, যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দায়িত্ব অবশ্যই সমাজকে নিতে হবে। একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এটি করা হয়নি। কিন্তু একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের নামে যে মোটাতাজাকরণ প্রকল্প চালু হয়েছিল, সেটির পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে সমাজের চোখে তাঁদেরকে একটা বিশেষ সুবিধাভোগী সম্প্রদায় হিসেবে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার এ ধারণা সুবিবেচনা থেকে আসেনি।
একাত্তরে ও চব্বিশে যাঁরা লড়াই করেছেন, তাঁরা এটা তাঁদের নিজেদের জন্য করেননি। তাঁরা লড়েছেন দেশের সব মানুষের মুক্তির জন্য। নানান উৎকোচ দিয়ে তাঁদের বিভ্রান্ত করে, তাঁদের আনুগত্য কিনে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। এখনো হচ্ছে। যোদ্ধাদের উচিত, এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। তা যদি না হয়, এসব উৎকোচের ভাগ পেতে কাড়াকাড়ি পড়ে যাবে। ব্যাঙের ছাতার মতো অগুনতি যোদ্ধা পয়দা হবে। চলবে ঘুষবাণিজ্য, যেমনটি করেছিল আগের সরকারগুলো। তার আলামত দেখা যাচ্ছে।