বর্তমানে পাহাড়ের ঢালে ও ঢালের মধ্যবর্তী খাড়িতে, ছড়ার পাড়ে প্রতিবছর বিভিন্ন মৌসুমে বাণিজ্যিকভাবে ফলানো হচ্ছে সমতলের মতো ঝাড়শিম, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি, বরবটি, টমেটো, বিলাতি ধনিয়া, তামাক, আখ, মরিচ ইত্যাদি ফসল। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, রাঙামাটিতে ২০২০-২১ সালে ৩ হাজার ৩১৪ একর জমিতে আনারস ও ৩ হাজার ৭৪৮ একরে আম চাষ করা হয়েছে। আম চাষ করা হয়েছে বান্দরবানে ২ হাজার ৮৩৯ একর ও খাগড়াছড়িতে ৪ হাজার ২০৭ একরে। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমেও সৃজিত হয়েছে অনেক ফলের বাগান। যেসব ফলের চাষ সাধারণত সমতল এলাকায় হয়, সেগুলোই এখন পাহাড়ে হচ্ছে। এটা আমাদের আনন্দিত করে, ঢাকা শহরে পার্বত্য আম্রপালি আমের ব্র্যান্ডিং হয়েছে, দেশে ফলের উৎপাদন বাড়ছে, যা আমাদের পুষ্টি উন্নয়নে সহায়ক হচ্ছে। কিন্তু এর ফলে স্থানীয় পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য তথা বাস্তুতন্ত্রের যে ক্ষতি হচ্ছে, তা হয়তো আমরা চোখে দেখছি না, কিন্তু তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। চাষ করতে গিয়ে পাহাড়ের ঢালের যে মাটিকে চাষ দিয়ে আলগা করা হচ্ছে, বৃষ্টিতে সেসব মাটিই ধুয়ে পাহাড়ের ছড়া ও খাল ভরাট করে দিচ্ছে, কখনো কখনো মাটি নরম হয়ে ভূমিধস ঘটাচ্ছে। জলাশয়, নিম্নভূমি, ছড়া ইত্যাদি ভরাট হওয়া মানে অনেক জলজ জীববৈচিত্র্যকে নিশ্চিহ্ন হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া।
অনেক পাহাড়ে এখন স্থায়ীভাবে গড়ে উঠেছে আম, কাঁঠাল, লিচু ইত্যাদি ফলের বাগান। চাষ বাড়ছে চা, কফি ও কাজুবাদামের। সম্প্রতি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে অবসরে যাওয়া অতিরিক্ত পরিচালক পবন চাকমা বলেন, তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা খাগড়াছড়ির পাহাড়ে। তিনি বললেন, ছোটবেলায় যে পাহাড়ি পরিবেশ ছিল, পানির উৎস ছিল, বিভিন্ন প্রাণী ও গাছপালা ছিল, এখন তার অনেকটাই নিঃশেষ হয়ে গেছে। পাহাড়ে জুমিয়ারাও এখন জুমচাষ ছেড়ে অর্থকরী ফসল হিসেবে ব্যাপকভাবে হলুদ, ছড়াকচু বা মুখিকচু ও কাসাভা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। মাটিরাঙ্গা, গুইমারা, লক্ষ্মীছড়ি, মানিকছড়ির পাহাড়গুলোতে এখন এটা খুবই সাধারণ দৃশ্য। এসব ফসল তুলতে মাটি কোপাতে হয়। মাটি কুপিয়ে চাষ করা হচ্ছে আনারস। এতে মাটি আলগা হয়ে পাহাড়গুলো ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে। আলগা মাটি পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ছে। সেসব মাটিতে ঝিরিগুলো ভরে যাচ্ছে। ছোটবেলায় মাটিরাঙ্গার ঝিরিতে যে ছোট ছোট দেশি মাছ ছিল, আজ আর সেখানে তার কিছুই নেই।