ঢাকা ডায়েরি | প্রথম আলো


ইন্টারকন্টিনেন্টালে কিছু মানুষ সমস্যা সৃষ্টি করেছে বলে খবর পেলাম এবং হোটেলে ফিরে গেলাম। প্রবল উত্তেজিত এক মুক্তিকে হোটেলের ফটক দিয়ে ভেতরে আনা হয়েছে, যার পায়ে প্রচণ্ড আঘাত। মুক্তিকে অবশেষে হোটেলের তিনটি চেয়ারের ওপর শোয়ানো হলো। হোটেলের কর্মকর্তারা এলেন, সেই কেতাদুরস্ত গ্লেন প্লেইড স্যুট পরে। হোটেলের কর্মকর্তা বললেন, ‘আমার সেরা চেয়ারগুলো তাঁর রক্তে ধুয়ে গেল এবং সব জারজ তার পায়ের আঙুলেই আঘাত করেছে।’

এই শহর সশস্ত্র আতঙ্কিত মানুষে পূর্ণ হয়ে আছে: উত্তেজিত তরুণ মুক্তি, বিভ্রান্ত ভারতীয়রা এবং ভীত পাকিস্তানি সেনারা, যারা আত্মসমর্পণ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা জানে না কীভাবে এবং কার কাছে তা করবে।

আজ বিকেলে জেনারেল নাগরা ও পাকিস্তানি জেনারেল ফরমান হোটেলের ফটকে এলেন জিপে করে। ফরমানের চারপাশে জটলা বেঁধে গেল এবং তারা চেঁচাতে লাগল এই বলে, ‘কসাই, খুনি, জারজ।’ ফরমান সেই জটলার দিকে এগিয়ে গেলেন এবং ধীর স্বরে বললেন, ‘কিন্তু আপনারা কি জানেন না, আপনাদের জন্য আমি কী করেছি?’ আত্মসমর্পণকেই তিনি বুঝিয়েছিলেন, যেটি অনেক প্রাণ বাঁচিয়েছিল। হয়তো মানুষের জটলাও সেটি জানত, কিন্তু তারা তোয়াক্কা করছে না।

বিকেল ৫টা এবং প্রতিবেদকেরা আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের জন্য গলফ কোর্সে দৌড়ে গেলেন। আত্মসমর্পণের দলিল চার দফায় স্বাক্ষর হলো। কিছুটা সময় লাগল, কারণ জেনারেল নিয়াজি সব দলিল পড়লেন এমনভাবে, যেন প্রথমবারের মতো পড়ছেন। স্বাক্ষরের পর দৃশ্যপট সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ল। জড়ো হওয়া মানুষেরা ভারতীয় জেনারেলদের কাঁধে তোলার চেষ্টা করল, পাকিস্তানের জেনারেলরা মানুষের ভিড়ে বিস্মৃত হয়ে গেলেন। মানুষের ভিড়ে মিশে যেতে যেতেও জেনারেল ফরমান হয়ে পড়লেন একলা, হতবাক। দুজন বাঙালি দৌড়াতে দৌড়াতে জেনারেল ফরমানের সঙ্গে ধাক্কা খেল, ওই অবস্থাতেই ফরমান বিড়বিড় করে বললেন, ‘দেখছেন, আমরা সবখানেই প্রহৃত হলাম।’ ফরমান ধীরে ধীরেই হাঁটতে থাকলেন, সোয়েটারের পকেটে এক হাত ঢোকানো ছিল। ‘এই জায়গা থেকে আমি বের হব কীভাবে?’ ভিড়ের মধ্যে তাঁকে হারিয়ে ফেলার আগে অবশ্য এ ব্যাপারে বিশেষভাবে নির্দিষ্ট কাউকে তিনি কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। (সংক্ষেপিত)

সূত্র: ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, প্রথম আলো



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *