রাজনৈতিক কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বৈষম্য করা হয়েছিল


গেরিলাদের অস্ত্র সরবরাহ করার বিষয়টি আগস্ট-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনিষ্পন্ন ছিল। এরপর কলকাতায় ৮ থিয়েটার রোডে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক করতে আসেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল এম এ এম মানেকশ এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম হলো ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দপ্তর। আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীকে সহযোগিতা করেন ২ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ। অজ্ঞাত কারণে কর্নেল ওসমানী এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় উপস্থিত ছিলেন না।

খালেদ মোশাররফ মুক্তিযোদ্ধাদের ভারী অস্ত্র দেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করছিলেন। তবে জেনারেল মানেকশ যুক্তি দিয়ে তাঁকে নিবৃত্ত করেন। তিনি বোঝান যে গেরিলারা ভারী অস্ত্র বহন করে না। ভারী অস্ত্র একদিকে তাদের দ্রুত চলাচলে বাধা তৈরি করে, অন্যদিকে শত্রুর কাছে অবস্থান জানান দিয়ে দেয়। দুই দিনের সমঝোতা বৈঠক শেষে উভয় পক্ষ মতৈক্যে পৌঁছায়। সিদ্ধান্ত হয়, ১০ জনের একটি গেরিলা বাহিনীর জন্য নিম্নরূপ অস্ত্র সরবরাহ করা হবে:

(ক) দলনেতার জন্য একটি স্টেনগান

(খ) তিনটি এসএলআর (সেলফ-লোডিং রাইফেল)

(গ) ছয়টি পয়েন্ট থ্রি নট থ্রি (.৩০৩) রাইফেল

(ঘ) প্রত্যেকের জন্য দুটি করে হ্যান্ড-গ্রেনেড

কলকাতায় উদ্বাস্তু মানুষের একটা উল্লেখযোগ্য অংশই ছিল বিভিন্ন ধরনের পেশাজীবী। তাঁদের অনেকে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। যাঁরা অতটা সৌভাগ্যবান ছিলেন না, তাঁদের অনেকেই আবার নিজেদের ও পরিবারের শত বিপর্যয়ের মধ্যেও কিছু না কিছু কাজ করে আমাদের সহযোগিতা করেছেন। রেডিও পাকিস্তানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিল্পীরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগদান করেন।

বালিগঞ্জের একটি ভাড়া বাড়িতে ছিল এর স্টুডিও। তবে সম্প্রচারযন্ত্রটি কোথায় ছিল, আমরা কেউ তা জানতাম না। প্রতিদিন বিকেল চারটায় ধারণ করা অনুষ্ঠানের একটি ম্যাগনেটিক টেপ একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বিএসএফের একজন কর্মকর্তাকে হস্তান্তর করতে হতো। এরপর তা কোথায় কীভাবে যেত, তা আর জানার উপায় থাকত না। তবে সন্ধেবেলা ধারণ করা অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হতো।

এম আর আখতার মুকুলের ‘চরমপত্র’ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনন্য এক প্রেরণাদায়ী অনুষ্ঠান। স্বাধীন বাংলা বেতারে সক্রিয়ভাবে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন সৈয়দ হাসান ইমাম, আলমগীর কবির, সমর দাস, বারীন মজুমদার, মাধুরী চ্যাটার্জি, আলী যাকের, রাজু আহমেদ, বাদল রহমান, শহীদুর রহমান বাবু, লিজা হোসেন, কল্যাণ মিত্র, রুমা মুরশিদ, আবদুল জব্বার, আপেল মাহমুদ, কল্যাণী ঘোষ, রাখি চক্রবর্তী, মিতালী মুখার্জি, তারেক আলী, সুকুমার বিশ্বাস প্রমুখ। ধারাবাহিক নাটক জল্লাদের দরবারে বাংলায় এবং ভুট্টো কি কাহানি উর্দুতে প্রচারিত হতো। প্রথমটিতে ইয়াহিয়া খানকে জল্লাদ হিসেবে রূপায়িত করা হয়। দ্বিতীয়টিতে লারকানায় জুলফিকার আলী ভুট্টোর বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরা হতো। দুটি নাটকই চমৎকারভাবে লেখা হতো।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *