সংস্কার মানে কি অদক্ষ সংস্থার প্রতিপালন


টিঅ্যান্ডটির দরজায় ধরনা দিয়ে ফোনের সেবা পেতে হলে করিমন, ছমিরন বিবিরা ইহজনমে মুঠোফোন ব্যবহার করতে পারত না। সেটি গ্রামীণফোনের প্রবর্তক আজকের প্রধান উপদেষ্টা সবচেয়ে ভালো জানেন। তারপরও কেন এই অদক্ষ ও মার্কামারা দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি সংস্থাগুলোকে সব জায়গায় প্রশ্রয় দেওয়ার নাম সংস্কার নয়। 

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বা বিপিসি অদক্ষতা ও দুর্নীতির গুদাম। এটি জ্বালানি খাতকে জ্বালিয়ে দিয়েছে। এককালে এর ভেতরে অনুসন্ধান ও নিরীক্ষাকর্ম নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সংস্কারের ধাপেই এসব সংস্থাগুলোকে খতম করা উচিত ছিল জনস্বার্থেই। রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় এলে আপস করবে। এদের সরাবে না। সেখানে দলবাজি আছে। রয়েছে ভোটের হিসাব। এদের অদক্ষতার দায়ভার শেষতক জনগণের কাঁধেই চাপানো হয়। করের টাকা দিয়ে লুণ্ঠিত ব্যাংকের পুনঃপুঁজিকরণ সম্পন্ন করা কিংবা বিপিসিকে টাকা দেওয়া একধরনের মৃদু মাপের দেশদ্রোহ।

নতুন সরকারের কর্মতালিকায় এগুলো আসছে না। শুধু দু–একজন উপদেষ্টা আর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাজ ছাড়া আর কারও কর্মে বা কথায় কোনো দীর্ঘমেয়াদি দিকনির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছে না। বিশৃঙ্খলা, চাঁদাবাজি বা সিন্ডিকেটের দাপট না কমালে যে মূল্যস্ফীতি কমবে না, সে কথা বহু–উচ্চারিত হওয়ার পরও আজ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা একেবারেই নিরামিষাশী। সেনাবাহিনী কিছুটা অক্সিজেন সরবরাহ করছে মাত্র। কিন্তু মূল কাজটি পুলিশ বিভাগের। রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় না থাকার কারণে গোয়েন্দা বিভাগগুলোও কাজে আনন্দ পাচ্ছে না।

শুধু সাধারণ মানুষ নয়, খোদ ছাত্রনেতা ও সমন্বয়কদের মধ্যেও দিন দিন হতাশা বাড়ছে। ক্ষমতাপ্রাপ্ত কয়েকজন নেতা আসল কাজে মনোযোগ না দিয়ে নানামুখী বিদ্বেষ ও অস্থিরতা বাড়াচ্ছেন। এভাবে চললে ব্যবসায় বাঁচবে না, মানুষ কাজ পাবে না, সরকার কর পাবে না।

রাষ্ট্র চলবে কী করে? অদক্ষ ও দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি সব সংস্থার বিলুপ্তি ঘটিয়ে সব ব্যবস্থাপনায় ব্যক্তি খাতের প্রতিযোগিতামূলক অংশগ্রহণ না বাড়ালে অর্থনীতি গতিশীল হবে না। যোগ্যতা থাকার পরও যদি দেশি বা বিদেশি সংস্থাগুলো দেশীয় কর্মকাণ্ডে নিয়োগ না পায়, তাহলে বিদেশি বিনিয়োগও আসবে না, দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়ে রপ্তানিও বাড়বে না। কাটবে না রিজার্ভ সংকট। সংস্কারের মূল লক্ষ্য হোক যোগ্যতার ভিত্তিতে কাজ এবং চিহ্নিত অদক্ষ সংস্থাগুলোর অপসারণ। 

ড. বিরূপাক্ষ পাল যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক অ্যাট কোর্টল্যান্ডে অর্থনীতির অধ্যাপক



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *