‘বন্দর শহর চট্টগ্রাম’ বইতে আবদুল হক চৌধুরী লিখেছেন, সেকালে জাহাজ নির্মাণের প্রধান উপকরণ লোহাকাঠ, সেগুন ও জারুল চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণ ছিল বলেই প্রাচীনকাল থেকে এখানে জাহাজ নির্মাণশিল্প গড়ে উঠেছিল। আবদুল হক চৌধুরীর বই থেকে আরও জানা যায়, চট্টগ্রামের জাহাজ নির্মাণশিল্পের কারিগরদের বসবাস ছিল ডবলমুরিং থানার হালিশহর গ্রামের বালামীপাড়ায়। পাড়াটি ছিল হিন্দুপাড়া। এ ছাড়া আগ্রাবাদের কিছুসংখ্যক মুসলমানও এই পেশায় কাজ করতেন। বালামীপাড়ার কারিগরেরা ছিলেন নিরক্ষর, কোনো প্রকৌশলজ্ঞান ছিল না তাঁদের। করাত, হাতুড়ি, বাটালি দিয়ে কোনো নকশা ছাড়াই জাহাজ বানাতে পারতেন কারিগরেরা। সেকালের চট্টগ্রামের সরের জাহাজের কাপ্তানদের মধ্যে নসু মালুম, আবদুল মালুম, গুমানী মালুম, আসদ আলী মালুম, আকবর আলী মালুমের নাম এখনো এই নগরের বয়স্ক লোকজন জানেন। শহরের কিছু এলাকা ও রাস্তাও রয়েছে তাঁদের নামে। সেকালের সরের জাহাজের নিরক্ষর অথচ অভিজ্ঞ মালুমেরা প্রথম যুগে আকাশের নক্ষত্র দেখে পরবর্তীকালে একটিমাত্র দিগ্দর্শন যন্ত্রের সাহায্যে সাগরে জাহাজ পরিচালনা করতেন।
জাহাজমালিকদের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন দেওয়ান আলী, মদন কেরানি, জগমোহন মহাজন, রৈঙ্গা বসির, জব্বর আলী, কোরবান আলী, আবজান বিবি, আসমত আলী, দাতারাম চৌধুরী, রামমোহন দারোগা, কিশোরী মোহন সেন, পিরু সওদাগর, শরীয়তুল্লাহ সওদাগর, রামসুন্দর সেন ও এয়াকুব আলী দোভাষ।