সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন, বিশ্বরাজনীতিতে রাশিয়াকে কোণঠাসা করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা আর সেই সুযোগে ন্যাটো নামের আগ্রাসী জোটের সম্প্রসারণ-নীতির উসকানি এই যুদ্ধকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে। এ বইকে বলা যেতে পারে স্বাধীন দেশ হিসেবে ইউক্রেনের আত্মপ্রকাশের আকাঙ্ক্ষা, রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের ঐতিহাসিক জাতিগত ঐক্যের পটভূমি ও ইউক্রেনকে পশ্চিমা রাজনৈতিক বলয়ে টেনেহিঁচড়ে আনার মার্কিন প্রয়াসের এক অনবদ্য ও বাহুল্যবর্জিত বিবরণ।
খালি চোখে দেখা যায়, রাশিয়া পার্শ্ববর্তী দেশ ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে নিজের ভূরাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করছে। কিন্তু লেখক বদরুল আরব ইতিহাসের বিভিন্ন কালপর্ব থেকে ঘটনা তুলে এনে দেখান, বিষয়টি মোটেও এমন সহজ-সরল ও একপক্ষীয় নয়। বরং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা শক্তিগুলো রাশিয়াকে এই যুদ্ধে যেতে বাধ্য করেছে। বলা বাহুল্য, ইউক্রেনের মতো ছোট একটি দেশ পশ্চিমাদের সাহায্য-সহায়তা ছাড়া রাশিয়ার মতো পরাশক্তিকে এভাবে ক্রমাগত যুদ্ধের উসকানি দিতে পারে না।
সে কারণে লেখক যথার্থই বলেছেন, বইটির শিরোনাম ‘রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ’ কতটুকু প্রাসঙ্গিক, সে বিষয়ে তাঁর নিজেরই সংশয় আছে। তাঁর নিজের ভাষ্য: ‘শিরোনামটি আমার ধারণায় আরও মানানসই হতো যদি তার নাম দেওয়া যেত ‘রুশ-ন্যাটো’ অথবা ‘রুশ-মার্কিন যুদ্ধ’। কেন এই ধারণা, তার পেছনে অন্তত দুটি কারণ উল্লেখ করতে পারি। প্রথমত, এ যুদ্ধ কখনো শুরু হতো না যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্ররোচিত না করত। দ্বিতীয়ত, এই যুদ্ধে ইউক্রেন সর্বতোভাবে সাহায্য পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো নামের সামরিক সংস্থা থেকে। আমেরিকার ওপর ইউক্রেন আজ এমনভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে যে তার অর্থনীতি, রাজনীতি, সামরিক সাজসরঞ্জাম সরবরাহ, সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ, কৌশলগত উপদেশ, এমনকি যুদ্ধ বন্ধ করা নাকি চালিয়ে যাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের নিয়ন্ত্রক যুক্তরাষ্ট্র। ফলে যুদ্ধটা প্রকৃত বিচারে রাশিয়ার সঙ্গে ন্যাটোর, আর সেই অর্থে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের।’
এই দৃষ্টিভঙ্গি লেখকের একার নয়, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের খ্যাতিমান পণ্ডিত যেমন, জন মেরসিমার, ক্রিস হজ বা জেফরি স্যাক্সও এই মত পোষণ করেন বলে লেখক জানিয়েছেন।