রাজধানীকে কম ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নিতে হবে 


আনোয়ার হোসেন ভূঁঞা: ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার সম্ভাব্য স্থান বলতে মূলত ‘রিং অব ফায়ার’ ও ‘আলপাইন-হিমালয়ান’ অঞ্চলকে বোঝায় এবং বাংলাদেশ ‘আলপাইন-হিমালয়ান’ অঞ্চলে অবস্থিত। বাংলাদেশের ভূমিকম্পের প্রবণতা ও ঝুঁকি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় দুটি ভূগাঠনিক জোনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এগুলো হলো পূর্বাঞ্চলীয় সাবডাকশন জোন ও উত্তরাঞ্চলীয় ডাউকি ফল্ট জোন। এসব স্থানে অনিবার্যভাবে ভূমিকম্প সংঘটিত হবে। এখন প্রশ্ন হলো, ভূমিকম্পের ঝুঁকি হ্রাসে আমরা কীভাবে প্রস্তুতি নিতে পারি। ভূমিকম্পের ঝুঁকি হ্রাসে আমরা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নিতে পারি। উভয় ক্ষেত্রে তিন ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে। প্রথমত, পূর্বপ্রস্তুতি। জনগণের মধ্যে ভূমিকম্প–সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধি করা, ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সঠিক নির্মাণস্থান নির্ধারণ করে নির্মাণকৌশল প্রণয়ন করা এবং স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে নির্মাণ বিধিমালা মেনে চলা।

বাংলাদেশের কোন কোন জায়গায় চ্যুতি বা ফাটল আছে, তা চিহ্নিত করা যায় এবং কিছু করাও আছে। কিন্তু এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য–উপাত্তসহ তালিকা প্রণয়ন এবং ফল্ট-জোন নির্ধারণ করে ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলের ম্যাপিং থাকা দরকার। যেসব স্থানে চ্যুতি বা ফাটল আছে, সেসব স্থান বড় স্থাপনার জন্য পরিত্যাগ করতে হবে। ভূতাত্ত্বিক গঠনের ওপর ভিত্তি করে একটি ম্যাপিং দরকার। সেই ম্যাপের ওপর ভিত্তি করেই পরিকল্পনা করতে হবে। আমরা দেখলাম, ব্যাংককের ৩০ তলা ভবন ধসে পড়ল।

ভূমিকম্প সংঘটিত হলে আমাদের ভূগর্ভস্থ জলসম্পৃক্ত পাললিক শিলাস্তর তরলীকৃত অবস্থায় পর্যবসিত হয়ে বিপুল স্থান দেবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিধস ও পাহাড়ধস হতে পারে। সেসব স্থানে ঝুঁকিপ্রবণ অঞ্চলগুলোর বিস্তারিত ম্যাপিং করতে হবে। গ্যাস, বিদ্যুৎ বা পানির সরবরাহ এবং পয়োনিষ্কাশন লাইনগুলোর টেকসই উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসব পরিষেবায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দুর্ঘটনাজনিত ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

দ্বিতীয়ত, দুর্যোগের সময় মানুষের জীবন রক্ষায় করণীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও মহড়ার মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

তৃতীয়ত, দুর্যোগ–পরবর্তী উদ্ধারকাজ কেমন হবে, এর পরিকল্পনা করা। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দ্রুত বর্ধনশীল অপরিকল্পিত নগরায়ণের প্রক্রিয়ায় বিকেন্দ্রীকরণ আনয়ন করতে হবে। যেহেতু রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় নগরগুলো ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত এবং নগরের অধিকাংশ  স্থাপনা সঠিক নির্মাণবিধি মেনে নির্মিত হয়নি, বিকেন্দ্রীকরণের প্রক্রিয়ায় নগরগুলোর উন্নয়ন করতে হবে। বিশেষ করে রাজধানী শহরকে ধীরে ধীরে কম ভূমিকম্পপ্রবণ পশ্চিম অথবা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে স্থানান্তরের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। মোটকথা, ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় একটি সুষ্ঠু ভূতাত্ত্বিক পরিকল্পনা থাকতে হবে, যার মাধ্যমে আমরা ভূমিকম্পের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি সীমিত রেখে বিপদের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারি।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *