১৯৩৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পানামা সিটিতে জন্ম নরিয়েগার। তাঁর জন্মস্থান থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত পানামা খালের দূরত্ব ছিল খুবই কম। তরুণ বয়সে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। স্মার্ট ও নির্মম হিসেবে নরিয়েগার পরিচিতি ছিল। তাঁর সাইক্লপস বা মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ পরিচালনার প্রতি ঝোঁক ছিল। তিনি মাও সেতুং, হো চি মিন এবং ত্রয়োদশ শতাব্দীর মঙ্গোলীয় যুদ্ধবাজ চেঙ্গিস খানের ভক্ত ছিলেন।
১৯৬৮ সালে সেনা অভ্যুত্থানে ওমর তোরিজোসের সঙ্গী ছিলেন নরিয়েগা। পরে তোরিজোস তাঁকে গোয়েন্দাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। তিনি সেনাবাহিনীর দুর্নীতিগ্রস্ত বিভিন্ন চুক্তি তদারকি করতেন এবং এর নির্মম গোপন পুলিশ বাহিনী পরিচালনা করতেন।
১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিক থেকে সিআইএর সহযোগী হিসেবে কাজ করেন নরিয়েগা। ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে পানামা, এল সালভাদর এবং নিকারাগুয়ায় মার্কন বাহিনীকে সহায়তা করতে শুরু করেন তিনি। এর পর থেকে নিজের স্বার্থে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও পানামার কর্মকর্তাদের কাজে লাগাতে শুরু করেন।
১৯৮১ সালে তোরিজোস বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হলে দুই বছরের মধ্যেই পানামার শাসক হন নরিয়েগা। কিন্তু এর আগে থেকেই তিনি কলম্বিয়ার মাদকসম্রাট পাবলো এসকোবারের মতো অনেককেই যুক্তরাষ্ট্র, পানামাসহ বিভিন্ন স্থানে মাদক পাচারে সুযোগ করে দেন। এর বিনিময়ে ব্যাপক অর্থ পেতে থাকেন তিনি। ১৯৭৮ সাল নাগাদ নরিয়েগার এসব কর্মকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ধরা পড়ে। ১৯৮৩ সাল নাগাদ তাঁর বিরুদ্ধে অনেক প্রমাণ জোগাড় করা হয়। কিন্তু ওই সময়কার স্নায়ুযুদ্ধের সময় মধ্য আমেরিকায় বামপন্থী উত্থান ঠেকাতে পানামাকে বাফার অঞ্চল হিসেবে দেখা হয়।
১৯৮৫ সালে পানামার নির্বাচনে নিকোলা আদ্রিতো বারলেতা জয়ী হলেও নরিয়েগা তা মেনে না নেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত ছিল, পানামা খাল পানামার হাতে তুলে দিতে ওই নির্বাচন হতে হবে।
নরিয়েগার বিরুদ্ধে ভূরাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগও আনা হয়েছিল। কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রো এবং লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে গোপনে সমর্থন দেন তিনি। এ ছাড়া অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে পড়েন। ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের মাদক নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ে ৮০টি ফাইল জমা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কৌঁসুলিরা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার আট সপ্তাহ আগে সিআইএ বলে, তাঁর বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ নেই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ধৈর্য কমছিল।