এটি প্রমাণিত সত্য যে কৃতজ্ঞতার অনুভূতি চিরস্থায়ী নয় এবং এই সত্য বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে স্পষ্ট প্রতিভাত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের সমর্থন, সাহায্য, সহযোগিতা, সহমর্মিতা ছিল অতুলনীয়, যা তাদের নিজস্ব সামর্থ্যের সীমা অতিক্রম করেছিল। কারণ, এটা করতে গিয়ে তাদের অর্থনীতি ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছিল এবং মিসেস গান্ধীকে সংসদের বিরোধী দলের সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছিল।
ভারত কেবল এক কোটির বেশি শরণার্থীকে আশ্রয়ই দেয়নি, তাদের রক্ষণাবেক্ষণেও মানবিকতা ও সহানুভূতির অসাধারণ উদাহরণ স্থাপন করেছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ৩ হাজার ৯০০ সৈন্য প্রাণ হারিয়েছেন এবং ১০ হাজার আহত হয়েছেন, যাঁদের অনেকেই সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলেন।
এর বিপরীতে ২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া একটি ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে। বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু রোহিঙ্গাদের প্রায়ই অবাঞ্ছিত অতিথি হিসেবে দেখা হয়েছে। এটি বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর প্রতি মনোভাবের একটি স্পষ্ট বৈপরীত্য।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর বন্ধনের গল্প শোনা যায়। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু মায়েরা মুসলিম শরণার্থী ছেলেদের প্রতি যে মমত্ববোধ ও সহানুভূতি দেখিয়েছেন, তা অবিস্মরণীয়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘পূর্ব-পশ্চিম’ উপন্যাসে এমন একটি আবেগময় চিত্র চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে।
১৬ই ডিসেম্বরের ঐতিহাসিক দিনে রমনার রেসকোর্স ময়দানে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের অবিস্মরণীয় দৃশ্য এবং ঢাকার মানুষের আনন্দধ্বনি আজও আমাদের স্মৃতিতে অমলিন। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাদের প্রতি ঢাকাবাসীর উচ্ছ্বসিত অভ্যর্থনাও ছিল অবর্ণনীয়।
কিন্তু সেই গভীর সংহতি ও কৃতজ্ঞতার অনুভূতি কোথায় হারিয়ে গেল? কেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা মিলিয়ে গেল?