বার্নের সেই অলৌকিক ফাইনাল শেষ হয়নি আজও


বিশ্বকাপে সেটাই হচ্ছিল। ‘ট্রেকুয়ার্তিস্তা’ পজিশনে হিদেকুটিকে খেলানো হাঙ্গেরির সামনে প্রতিপক্ষ দলগুলো স্রেফ উড়ে যাচ্ছিল! গ্রুপ পর্বে তাদের কাছে দক্ষিণ কোরিয়া হেরেছে ৯–০ গোলে। পরের ম্যাচ ছিল পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে এবং সে ম্যাচে কোচ সেপ হেরবের্জার ও অধিনায়ক ফ্রিৎজ ওয়াল্টারের কৌশলের কাছে মার খেয়ে যায় হাঙ্গেরি। না, হারেনি, জিতেছিল ৮–৩ গোলে। কিন্তু পশ্চিম জার্মানির আসল শক্তি হাঙ্গেরি যেন টের না পায় সে জন্য নিজেদের প্রথম ম্যাচের মাত্র চার খেলোয়াড়কে হাঙ্গেরির বিপক্ষে একাদশে রেখেছিলেন হেরবের্জার। মানে পুরো শক্তির দল মাঠে নামাননি। আর পশ্চিম জার্মানির ডিফেন্ডারদের লক্ষ্য ছিলেন পুসকাস। হাড়ে চিড় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলারকে, যে কারণে ফাইনালে গোল করলেও আসল পুসকাসকে দেখা যায়নি।

আর ছিল বৃষ্টি। এ বিষয়ে ফ্রিৎজ ওয়াল্টারকে টানতেই হয়। ভদ্রলোক জার্মান ফুটবলের কিংবদন্তি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সাইবেরিয়ার গুলাগ বন্দিশিবিরে মৃত্যু এড়াতে পেরেছিলেন স্রেফ ফুটবলার হওয়ার কারণে। পথিমধ্যে ইউক্রেনের বন্দিশিবিরে এক নিরাপত্তারক্ষী তাঁকে চিনে ফেলেন। সৌভাগ্যবশত বন্দীদের তালিকা থেকে তাঁর নামটা কাটা পড়ে। এই ফ্রিৎজ ওয়াল্টার ম্যালেরিয়ায় ভোগার কারণে রোদে ভালো খেলতে পারতেন না। কিন্তু বৃষ্টি নামলে তাঁর তুলনা ছিল না। ইনসাইড ফরোয়ার্ড কিংবা অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে স্রেফ অবিশ্বাস্য। সেদিন ফাইনালেও বৃষ্টি নেমেছিল, হাঙ্গেরি তাতে অভ্যস্ত ছিল না। কিন্তু পশ্চিম জার্মানির তো পোয়াবারো! তাদের খেলোয়াড়দের পায়েও ছিল বৃষ্টি ও কাদায় খেলার উপযোগী নতুন একধরনের বুট—যেটার স্পাইক পাল্টানো যেত। বিরতির পর পশ্চিম জার্মানির খেলোয়াড়েরা নাকি বুটের কাদামাখা স্পাইক (দৌড়ে অসুবিধা হয়) পাল্টে মাঠে নেমেছিলেন।

বাকিটা স্কোরবোর্ডে, হাঙ্গেরিয়ান ও জার্মানদের হৃদয়ে। কেউ হয়েছেন ক্ষতবিক্ষত, কারও আবার বসন্ত।

পশ্চিম জার্মানির সেই বাসন্তিক আনন্দে কলঙ্কের দাগও লেগেছে।

৬.

বার্লিনের হামবোল্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে সেই ম্যাচ নিয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছিলেন খেলাধুলার ইতিহাসবিদ ও লেখক এরিক এগার্স। তাঁর সেই গবেষণার ফল নিয়ে ২০১০ সালে বার্তা সংস্থা রয়টার্স একটি প্রতিবেদন করেছিল, যেখানে এগার্স বলেছেন, ‘জার্মানির কিছু খেলোয়াড় ভিটামিন সি নেওয়ার কথা বলে ইনজেকশনের মাধ্যমে পেরভিতিন নিয়েছিলেন, এর পক্ষে শক্তিশালী কিছু ইঙ্গিত আছে।’

পেরভিতিন ছিল শারীরিক শক্তিবর্ধক স্টিমুল্যান্ট, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহার করেছে জার্মান সেনাবাহিনী। সে বিশ্বকাপে খেলোয়াড়দের ডোপ টেস্ট করা হয়নি। এগার্সের ভাষায়, ‘সন্দেহজনক বিষয় হলো, জার্মানির খেলোয়াড়েরা গোপনে এই ইনজেকশন নিজেদের মধ্যে বণ্টন করেছিলেন এবং যে একমাত্র কারণে ব্যাপারটি পরে জানাজানি হয়েছিল সেটা হলো, ইনজেকশন ব্যবহার করা সবার জন্ডিস হয়েছিল।’ এগার্সের পক্ষে সায় দিচ্ছে ইতিহাসও। পশ্চিম জার্মানির সেই দলের এক খেলোয়াড় জন্ডিসে ভুগে মারাও গেছেন। আর এগার্সের যুক্তি হলো, ভিটামিন সির প্রয়োজন হলে তাঁরা কমলাজাতীয় ফল খেলেই পারতেন।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *