সেনাপ্রধান হয়েও এরশাদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে ‘হস্তক্ষেপ’ করেন। বিএনপির একাংশ চাইছিল জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া প্রার্থী হোন। অপরাংশ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারের সমর্থক ছিল। এ প্রসঙ্গে জিয়ার এককালীন মন্ত্রী ও দ্বিতীয় জাতীয় সংসদের প্রভাবশালী সদস্য মওদুদ আহমদ লিখেছেন, ‘সাত্তারের প্রতি সেনাবাহিনীর সমর্থনের কারণে তাঁদের (সাত্তারের অনুসারীদের) পক্ষে ওই একগুঁয়ে মানসিকতা ও শক্তি প্রদর্শন সম্ভব হয়।’ (চলমান ইতিহাস, জীবনের কিছু সময়, কিছু কথা)
মন্ত্রিত্ব যাওয়ার পর মওদুদ আহমদ বিএনপির ‘বিদ্রোহী গ্রুপের’ নেতা হন। বিএনপির ৯০ জন সংসদ সদস্য তাঁর প্রতি আস্থাশীল ছিলেন বলে নিজের বইয়ে উল্লেখ করেছেন। মওদুদ যখন খালেদা জিয়ার মনোনয়নের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছিলেন, তখন এরশাদ বঙ্গভবনে চারজনের একটি বৈঠকের ব্যবস্থা করেন; যাঁদের মধ্যে ছিলেন এরশাদ নিজে, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তার, প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান ও মওদুদ আহমদ।
মওদুদ লিখেছেন, ‘নির্বাচনে সাত্তারের জয় সুনিশ্চিত করার বিষয়ে জেনারেল এরশাদ এবং তাঁর সহকর্মীরা উদ্বিগ্ন ছিলেন। এ ব্যাপারে কোনোরকম গোলযোগ বা বাধা বা জটিলতা সৃষ্টি হোক, তাঁরা সেটা চাননি। কোনোরকম ঝুঁকি নিতে তাঁরা রাজি ছিলেন না।…এরশাদ একদিকে যেমন সাত্তারের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে চেয়েছেন, অন্যদিকে বিএনপির ভেতরকার দ্বন্দ্ব ও কলহ যেন চলতে থাকে, সেটাও চেয়েছেন।’ (চলমান ইতিহাস, জীবনের কিছু সময়, কিছু কথা)
১৯৮১ সালের ১৮ অক্টোবর সাপ্তাহিক হলি ডের সঙ্গে সাক্ষাৎকার দিয়ে এরশাদ আওয়ামী লীগ ও জেনারেল ওসমানীকে নাকচ করে দেন এবং বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিএনপির কোনো বিকল্প নেই।
এরশাদ এসব কথা বলেছেন বিএনপির প্রতি কোনো দরদ থেকে নয়। তিনি জানেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হলে তিনি তাঁদের বাগে আনতে পারবেন না। কিন্তু বিচারপতি সাত্তার জয়ী হলে তাঁকে দিয়ে যা খুশি করাতে পারবেন। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ সেদিকেই চালিত হয়।