মইনুল ইসলাম চৌধুরী: কেউ গুম হওয়ার পর ‘প্রেমের টানে চলে গেছে’, ‘পাওনাদারের ভয়ে চলে গেছে’ বলে বিগত সরকারের দেওয়া এমন বক্তব্যগুলো অসত্য ও ভিত্তিহীন ছিল বলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি। গুম করা হতো প্রধানত চার ধরনের ব্যক্তিকে। যেমন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। আরও সুনির্দিষ্টভাবে বললে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা–কর্মী। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি বা এমন ব্যক্তি, যাঁরা বিগত সরকারের সমালোচনা করতেন। সেই সমালোচনা ফেসবুকে, বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অথবা সংবাদপত্রের কলামে, টক শোতে বা অন্য কোনো মাধ্যমে হতে পারে। যেমন গুমের শিকার সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান অনলাইন প্ল্যাটফর্মে লিখতেন।
আবার লে. কর্নেল হাসিনুর রহমানকে বলা হয়েছিল ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’–এর সঙ্গে কাজ করার জন্য। তিনি তা করতে অস্বীকার করেন। এ জন্য চাকরিরত অবস্থায় তাঁকে গুম করা হয়। একজন চাকরিরত সেনা কর্মকর্তাকে বন্দুক ঠেকিয়ে তাঁর সহকর্মীরা গুম করবে—এটা ভাবা যায়? তাঁকে দুবার গুম করা হয়। লে. কর্নেল আবদুল্লাহ আলী জাহিদকেও সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় গুম করা হয়। তাঁকে ৯ মাস গুম করে রাখার পর কোর্ট মার্শাল করে চাকরিচ্যুত করা হয়।
এর বাইরে জঙ্গি সন্দেহেও গুম করা হয়েছে। আমাদের কাছে গুমের ঘটনায় যে অভিযোগগুলো এসেছে, সেগুলো বিশ্লেষণ করে দেখেছি। ধরা যাক, জঙ্গি সন্দেহে ১০০টি গুমের ঘটনা ঘটলে তার মধ্যে ৮০টিরই জঙ্গি–সম্পৃক্ততার অভিযোগ মিথ্যা ছিল। বাকি ২০ শতাংশ সত্য হলেও হতে পারে।
আরেকটি হলো ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত বিরোধ অথবা জায়গা–জমিসহ পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে টাকাপয়সা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে গুম করা। যেমন আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে কারও পারিবারিক দ্বন্দ্ব হলো, তিনি র্যাবকে বা পুলিশকে গুম করতে বললেন। পরে অভিযোগ দেওয়া হলো—তুলে আনা ব্যক্তি জঙ্গি বা জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত। কখনো কখনো ব্যক্তিগত স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও বিচ্ছিন্নভাবে কিছু গুমের ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন।