গণ–অভ্যুত্থানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা: সত্য না কল্পনা


ভারতীয় মিডিয়ার ষড়যন্ত্রতত্ত্ব অবশ্য এখানেই থেমে নেই। শেখ হাসিনা অনেক দিন থেকেই সেন্ট মার্টিন দ্বীপে আমেরিকা সামরিক ঘাঁটি বানাতে চায় বলে দাবি করে আসছিলেন। তিনি এমন কথাও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র পার্বত্য চট্টগ্রামের ও মিয়ানমারের খ্রিষ্টানদের নিয়ে নতুন একটি দেশ বানাতে আগ্রহী। তিনি এই দুই প্রকল্পের বিরোধী, আর সে কারণেই যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে উৎখাতে আগ্রহী। ভারতীয় মিডিয়া অবশ্য আগবাড়িয়ে বলছে, এই যে নতুন খ্রিষ্টান রাষ্ট্র তার লক্ষ্য হবে ভারতকে বাড়তে না দেওয়া।

কোথায় কোন তথ্যের ভিত্তিতে শেখ হাসিনা এমন দাবি করেছিলেন, আমরা জানি না। বাংলাদেশের ২০১১ সালের জনশুমারি থেকে আমরা জানি, পার্বত্য চট্টগ্রামে মোট ১৬ লাখ মানুষের বাস, যার বড়জোর ২০ শতাংশ খ্রিষ্টান। অর্থাৎ লাখ দুয়েক খ্রিষ্টান। অন্যদিকে মিয়ানমারে বেশ ভালোসংখ্যক খ্রিষ্টানের বাস হলেও তাদের অধিকাংশই চীন, কাচিন ও কারেন রাজ্যে বাস করে। এগুলোর কোনোটাই ঠিক বাংলাদেশের লাগোয়া নয়। লাগোয়া যে আরাকান বা রাখাইন রাজ্য, সেখানে হাতে গোনা কয়েক হাজার খ্রিষ্টানের বাস। তো, এই কয়েক লাখ মানুষ নিয়ে দেশ হবে, আর তা পাল্লা দেবে ভারতের সঙ্গে? বালখিল্য হয়ে গেল না কথাটা?

এই ষড়যন্ত্রতাত্ত্বিকেরা একটি জিনিস উপেক্ষা করে গেছেন। আর তা হলো ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং তারা একে অপরের কৌশলগত মিত্র। চীনকে ঠেকাতে আমেরিকার রণকৌশলের কেন্দ্রে ভারত। সে কারণেই ওয়াশিংটনের উৎসাহে দিল্লিকে চীনবিরোধী জোট কোয়াডে যুক্ত করা হয়েছে। অনেকে এমন কথাও বলে থাকেন, বাংলাদেশকে ‘ম্যানেজ’ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তার ‘লোকাল এজেন্ট’ হিসেবে ভারতকে দায়িত্ব দিয়েছে।

তবে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটা মতবিরোধ হয়েছে, তা কোনো গোপন ব্যাপার নয়। আমরা জানি, ভারতের মোদি সরকার গত ১৬ বছর হাসিনাকে অনুগত মিত্র বানাতে বিস্তর বিনিয়োগ করেছে। তাঁর অগণতান্ত্রিক ব্যবহার সত্ত্বেও হাসিনাকেই ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে মোদি সরকার ছিল অনমনীয়—এ কথাও এখন প্রমাণিত।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *