কোনো অ্যাডভেঞ্চারের অংশ হওয়া বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ


স্বপন আদনান: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য, যেটাকে আমরা সাধারণত আরাকান বলি, সেখানে রোহিঙ্গারা কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়, তারা সংখ্যালঘু। রাখাইনের বৌদ্ধরা হলো সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে একসময় সম্প্রীতির সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ২০১২ সালে একটি ভয়াবহ দাঙ্গা হয়। সেই সময় বহু রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যা করা হয়, লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে ক্যাম্পে আটক করা হয়। 

এরপর রোহিঙ্গাদের মধ্যে একধরনের প্রতিরোধ দেখা যায়। বেশ কিছু সশস্ত্র সংগঠনও তৈরি হয়। এর মধ্যে একটি হলো আরসা (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি)। ২০১৬ সালে আরসা পুলিশের একটি তল্লাশিচৌকিতে হামলা করে। এরপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সেখানে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আসে, অভিযান চালায় এবং একধরনের যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়। এর ফলে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য হয়। 

তবে আরসার হামলা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জন্য ছিল একটা অজুহাতমাত্র, তারা আগে থেকেই রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে আসছিল। এর একটি বড় কারণ, রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সরকারের প্রস্তাবিত ‘ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড’ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। এই কার্ড নিলে রোহিঙ্গাদের স্বীকার করে নিতে হতো যে তারা মিয়ানমারের নাগরিক নয়। 

রোহিঙ্গারা এই কার্ড নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে একধরনের নীরব প্রতিবাদ জানায়। এটা মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে ক্ষিপ্ত করে তোলে। তারা যে শুধু রোহিঙ্গাদের হত্যা করেছে বা ক্যাম্পে আটকে রেখেছে তা–ই নয়, রোহিঙ্গাদের গ্রাম, বাড়িঘর—সব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে। এর ফলে রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফেরত গেলেও তারা তাদের বসতভূমি বা জায়গাজমি ফেরত পাবে—এমন সুযোগ নেই।

গত কয়েক বছরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং একই সঙ্গে রাখাইনের পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বামারদের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা সশস্ত্র সংগ্রাম করছে। এর মধ্যে রাখাইনের বৌদ্ধরাও রয়েছে। তারাই হলো আরাকান আর্মি। 

আরাকান আর্মি জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইরত থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সদস্য। এখানে যেটা গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো, চীন একই সঙ্গে জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মি—উভয় পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখছে। কারণ, রাখাইনে চীনের অনেক ধরনের অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ইন্দো–প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি নীতিতে এ অঞ্চলে তাদের উপস্থিতি ও শক্তিবৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া ভারতও সেখানে নানাভাবে যুক্ত হয়েছে। এর ফলে রাখাইনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত অঞ্চল ভূরাজনীতির একটি হটস্পট হয়ে উঠেছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *