১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে জার্মানি পোল্যান্ডে আক্রমণ করলে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। তখন পরিবারটি বালমোরালে ছুটিতে ছিল। কোথায় থাকা নিরাপদ হবে বুঝতে না পেরে রাজা জর্জ ষষ্ঠ ও রানি লন্ডনে ফিরে যান। এলিজাবেথ ও মার্গারেটকে রেখে যান ধাত্রীদের কাছে। কিছুদিন স্যান্ড্রিংহ্যামে থাকার পর দুই রাজকন্যাকে উইন্ডসরে নিয়ে যাওয়া হয়। যুদ্ধকালে প্রায় পুরো সময়ই তারা সেখানেই ছিলেন।
যুদ্ধের বছরগুলোতেই শুরু হয় এলিজাবেথের প্রকাশ্য জীবন। ১৯৪০ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি প্রথমবার বিবিসির চিলড্রেনস আওয়ার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি শিশুদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমার বোন মার্গারেট রোজ আর আমি তোমাদের কষ্ট বুঝতে পারি। কারণ আমরাও জানি, সবচেয়ে প্রিয় মানুষদের কাছ থেকে দূরে থাকতে কেমন লাগে।’
এলিজাবেথের এই বক্তব্য শুধু ব্রিটিশ শিশুদের মনোবলই বৃদ্ধি করেনি, বরং জার্মানির বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের লড়াইয়ে শামিল হতে যুক্তরাষ্ট্রকেও উদ্বুদ্ধ করেছিল। গ্রিস্টউডের মতে, অল্প বয়সে এলিজাবেথ যে ভূমিকা পালন করেছিলেন, সেটা কার্যত ‘সফট ডিপ্লোমেসি’।
১৯৪৩ সালে রাজা ষষ্ঠ জর্জ মেয়ে দ্বিতীয় এলিজাবেথকে গ্রেনেডিয়ার গার্ডসের কর্নেল-ইন-চিফ ঘোষণা করেন। সেই বছরই তিনি প্রথমবারের মতো সেনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দুই বছর পর, যুদ্ধের শেষ দিকে তিনি তাঁকে উইমেনস টেরিটোরিয়াল অক্সিলিয়ারি সার্ভিসে যোগ দেওয়ার অনুমতি দিতে বাবাকে রাজি করান। সেখানে তিনি একজন চালক হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।
গ্রিস্টউডের মতে, এই সিদ্ধান্ত ছিল এলিজাবেথের সম্পূর্ণ নিজের। তিনি বলেছিলেন—‘যদি আমার বয়সী অন্য সব মেয়ের যুদ্ধের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তবে আমাকেও দেওয়া উচিত।’
১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষ হলে হাজারো মানুষ লন্ডনের রাস্তায় নেমে বিজয় উদ্যাপন করেন। সেই রাতে এলিজাবেথ আর মার্গারেটকে সাধারণ মানুষের ভিড়ের মধ্যে মিশে যাওয়ার বিরল সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।
রানি পরবর্তী সময়ে বলেছিলেন—সেটি ছিল তাঁর জীবনের সেরা রাতগুলোর একটি।