গ্র্যান্ড ট্রাংক রোড মাঝখানে রেখে আমাদের দুটি কোম্পানি বাংকার খুঁড়ে শক্ত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। প্রতিদিন পাকিস্তানি বাহিনী কামানের সাহায্য নিয়ে আমাদের ওপর আক্রমণ করে, আমরা প্রতিটি আক্রমণ সফলভাবে প্রতিরোধ করি। লে. মেঘ সিংকে অনুরোধ করে ৬টি ৩ ইঞ্চি মর্টার সংগ্রহ করি তাঁর কাছ থেকে। আমাদের শক্তি বৃদ্ধি হয়।
এলাকার ভৌগোলিক অবস্থান এমনই যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যোদ্ধাদের পক্ষে এলাকা রক্ষা করা খুব কঠিন নয়। আমরা মরণপণ লড়াই করে যাচ্ছি। প্রতিদিন শেলের আঘাতে আমাদের পক্ষে হতাহত হচ্ছে কিন্তু শত্রুর ক্ষয়ক্ষতি আমাদের তুলনায় অনেক বেশি। মহাসড়কের ওপর রয়েছে শতবর্ষী বিশাল বৃক্ষরাজি, যা আমাদের কামানের গোলা থেকে কিছুটা প্রটেকশন দেয়।
ইতিমধ্যে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিদের বীরোচিত সংগ্রামের কথা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাপী জনমত সংগঠিত হয় স্বাধীনতার সপক্ষে। পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত বাঙালি কূটনীতিকদের কয়েকজন লন্ডন, ওয়াশিংটন, কলকাতা, দিল্লি, বাগদাদ প্রভৃতি স্থানে বিদ্রোহ করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন। অন্যদিকে পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশে তাদের অত্যাচার-নির্যাতন ব্যাপকভাবে চালিয়ে যাচ্ছে।
ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে নিরীহ মানুষ হত্যা, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, নারী নির্যাতন করে পাকিস্তানি সেনারা এক নারকীয় তাণ্ডব সৃষ্টি করে। প্রায় এক কোটি নির্যাতিত মানুষ প্রাণভয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করেন। সে দেশের সরকার তাঁদের আশ্রয়, খাদ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। শরণার্থীদের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে।