সমতা ও আত্মমর্যাদার আন্দোলনে | প্রথম আলো


পরদিন ১৮ জুলাই দুপুরে ক্যাম্পাস থেকে নিরাপদ জায়গায় ধ্রুবকে এগিয়ে দিলাম। যারা গ্রেপ্তার আতঙ্কের মধ্যে ছিল, তাদের খোঁজ নিচ্ছিলাম। পরিচিত অনেকেই মেস ছেড়ে দিতে বাধ্য হলো। ছাত্রলীগ আর পুলিশ মিলে তখন ক্যাম্পাসের মেসগুলো তল্লাশি এবং শিক্ষার্থীদের বাড়ি ফেরার জন্য চাপ দিচ্ছিল। হৃদয় তরুয়া সেদিন টিউশন থেকে ফেরার পথে শহরে গুলিবিদ্ধ হয়।

এরপর ১৯ জুলাই, আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়। ঢাকাসহ সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে গণহত্যার মতো পরিস্থিতি তৈরি করা হলো। এ সময় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আর কলেজের শিক্ষার্থীরা জীবন দিয়ে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে গেল। তার আগেই আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ শত শত প্রাণ ঝরে গেল নিমেষেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও প্রতিবাদে নামলেন। সমন্বয়কদের জিম্মি করেও আন্দোলন থামানো গেল না। সব শ্রেণি–পেশার মানুষ নেমে এল রাজপথে। সর্বত্র গড়ে উঠল প্রতিরোধ।

চট্টগ্রামের সর্বশেষ কর্মসূচি ছিল ৪ আগস্ট। সেদিন নিউমার্কেটের কর্মসূচিতে পুলিশ আর আওয়ামী লীগ যৌথভাবে হামলা করে ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করেছিল। ওয়াসা মোড়ে গিয়ে জড়ো হলাম আমরা। পথে পথে তখন সেনাদের টহল। পুলিশ ব্যারাকে আটকা পড়া শিক্ষার্থীরা ওয়াসার মোড়ে জড়ো হচ্ছিল। পরে সমাবেশ শুরু হলো। 

চট্টগ্রাম তখন জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। আমার সঙ্গে ছিল চট্টগ্রাম শহরের মংপ্রুসাইন মারমা। বিকেলের মধ্যে ঢাকা থেকে ঘোষণা এল, আগামীকাল ৫ আগস্ট লংমার্চ টু ঢাকা। ক্যাম্পাসে ফিরে ঢাকায় যাওয়া নিয়ে কথাবার্তা হলো, কিন্তু যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো না। আমরা চট্টগ্রামে ছিলাম। তাই ৫ আগস্টের ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গণভবনে যেতে না পারার আক্ষেপ রয়েই গেল। 

চট্টগ্রাম শহরে একের পর এক বিজয় মিছিল, আমাদের ক্যাম্পাসেও তখন সবার উৎসুক দৃষ্টি, স্বস্তি ও উল্লাস; যেন জগদ্দল পাথর চেপে বসা বুক থেকে সরানো গেল। পরিচিতজনের হাসিমাখা মুখে জাতীয় পতাকা নিয়ে বাইরে উল্লাসরত—কী এক দিন!



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *