চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো অনেক ক্ষেত্রেই আংশিক বাস্তবায়ন করে অচল অবস্থায় রেখে দেওয়া হয়েছে নতুবা অবাস্তবায়িত অবস্থায় রাখা হয়েছে। উদাহরণ দেওয়া যাক। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটিকে পাশ কাটিয়ে ২০২২ সালে গঠিত পার্বত্য চুক্তিসম্পর্কিত একটি আন্তমন্ত্রণালয় কমিটির প্রতিবেদনে চুক্তির ‘খ’ খণ্ডের ৩৩ ও ৩৪ ধারার সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত ধারাগুলোর মধ্যে ‘জেলার আইনশৃঙ্খলা তত্ত্বাবধান, সংরক্ষণ ও উন্নতি সাধন, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, পুলিশ (স্থানীয়), বন ও পরিবেশ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন’ বিষয়গুলো জেলা পরিষদগুলোয় হস্তান্তরের কথা রয়েছে। কিন্তু এগুলো সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়েছে বলে দাবি করা হলেও সেগুলো এখনো জেলা পরিষদগুলোয় হস্তান্তর করা হয়নি।
আবার, চুক্তির ‘ঘ’ খণ্ডের অধীনে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিসম্পর্কিত যে ৩টি ধারা রয়েছে, তার মধ্যে ৪ নম্বর ধারা আংশিক বাস্তবায়িত এবং ৫ ও ৬ নম্বর ধারাগুলো সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়েছে বলে সরকারি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, গত ২৭ বছরে কোনো ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি এবং পাহাড়িরা এখনো তাদের অধিকার ফিরে পায়নি। জানা গেছে যে খাগড়াছড়িতে ভূমি কমিশনের কার্যালয়ে ২২ হাজার ৮৬৬টি দরখাস্ত জমা পড়ে। ভূমি কমিশন গঠিত হয়েছে বটে, তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশনের পর্যাপ্ত জনবল, তহবিল ও পরিসম্পদ নেই। ফলে ভূমি কমিশনের কার্যক্রম একপ্রকার বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া প্রশাসনের ছত্রছায়ায় বাঙালি সেটেলারদের বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে ২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাঙামাটিতে ভূমি কমিশন সভা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল।
চুক্তির মধ্যে আরও অনেক মৌলিক বিষয় রয়েছে, যা বিগত সরকার বাস্তবায়ন করেনি। অন্যদিকে, চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত একজন প্রতিনিধিকে আহ্বায়ক করে এবং চুক্তির আওতায় গঠিত টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান এবং জনসংহতি সমিতির সভাপতিকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে একটি চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি গঠনের বিধান অনুযায়ী কমিটি গঠিত হয়েছিল। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির কোনো দপ্তর নেই। কমিটির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোনো কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়নি। কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোনো তহবিল প্রদান করা হয়নি। ফলে চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণের সুযোগ তৈরি হয়নি।